,

জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় বয়ের পিঁড়িতে বসল দুই অনাথ

বর-কনে এতিম হলেও গেট-সাজসজ্জ্বা আর আয়োজনের কমতি ছিল না :: বিত্তবানরা নিয়ে আসেন নানান উপহার

স্টাফ রিপোর্টার : শামীম ও রুহেনা। দুই জনেই এতিম। ছোট বেলায় হারান বাবাকে। তারা বড় হন হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে সরকারি শিশু পরিবারে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বার্ষিক খেলাধুলায় অংশ নিতে গিয়ে এক অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব-প্রেম। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন তারা। শামীম মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামে। তিনি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। রুহেনার পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। পড়াশোনা করেছেন এসএসসি পর্যন্ত।
শামীম মিয়া তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানায় প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলামকে। তিনি বিষয়টি শেয়ার করেন সরকারি শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামানকে। পরে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি সানন্দে রাজি হন সুন্দর এই আয়োজনে। দুই অনাথের ঘর বাধার স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগ নেয়া হলে অনেকই এগিয়ে আসেন।
জেলা প্রশাসন থেকে বড় ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজসেবী লোকজনের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে তাদের ঘিরে আয়োজন করা হয় এই ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ের। বর-কনে এতিম হলেও আয়োজনের কমতি ছিল না। শামীম ও রুহেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে শিশু পরিবারে ছিল সাজ সাজ রব।
গেট আর সাজসজ্জ্বার কমতি ছিল না সেখানে। সমাজের বিত্তবানরা নিয়ে আসেন নানান উপহার। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে কাজী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বর ও কনেকে আর্শীবাদ করেন সবাই। অতিথিদের জন্য আপ্যায়নে ছিল রোস্ট, গরুর মাংসের রেজালা ও দুই।
ব্যতিক্রম এই বিয়ে আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতার শেষ নেই শামীম মিয়া ও রুহেনা বেগমের। তারা এই আয়োজন দেখে নিজেদেরকে আর অসহায় হিসেবে ভাবছেন না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া চান তারা। এতিম বর ও কনের এই ব্যতিক্রম আয়োজনে আনন্দিত উভয়ের পরিবার। তাদের স্বজনরাও আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ে আয়োজনের ব্যাপারে হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, এই আয়োজন ব্যতিক্রম। আমরা সব সময় ভাল কাজের সঙ্গে আছি। লন্ডন থেকে দেশে আসা বিশিষ্ট সমাজ সেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান স্ব-পরিবারে আসেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। তিনি বলেন, জীবনে অনেক বিয়েতে গিয়েছি। এই প্রথম একটি এতিমের বিয়েতে এসে খুব ভাল লাগল।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের ভাল কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। কেউ যাতে নিজেকে অসহায় মনে না করে, তার জন্যই এই আয়োজন। নবদম্পত্তিদের প্রতিও শুভেচ্ছা জানান তিনি।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলিও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সমাজে এ ধরনের কাজ সবার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এই আয়োজনে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আর না হলে এ ধরনের আয়োজন সম্ভব হত না।
এই আয়োজনকে সফল করতে যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেন তাদের মাঝে ছিলেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল, লন্ডন প্রবাসী সমাজ সেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, লন্ডন প্রবাসী আবুল কাশেম, ডা. জমির-তাহমিনা বেগম ফাউন্ডেশন, মানবিক হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর, ডা, মিঠুন রায়, জেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাকারিয়া চৌধুরী, মোদারিছ আলী টেনু, ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবের, হোসেড হবিগঞ্জ, লন্ডন প্রবাসী নাজমুল হক তুষার ও সৈয়দা কুমকুম প্রমুখ।


     এই বিভাগের আরো খবর